এক
বন্ধু রাকিব এর বাসায় শুক্রবারের এই আড্ডাটা ভারী প্রিয় আমাদের। রাকিবদের বাসাটা বেশ বড়সড়, বাসায় লোকসংখ্যাও কম। রাকিবের কোন ভাইবোন নেই। বাবা-মা দুজনেই ভীষণ ব্যস্ত নিজেদের কাজ নিয়ে। রাকিবের বাবা একজন বড় ইনডাসট্রিয়ালিস্ট, মা নামকরা ডাক্তার। প্রায় সময়ই বাসায় থাকেন না। বাসায় গণ্ডা খানেক কাজের লোক। সারাক্ষনই হুকুম তামিলে ব্যস্ত। ওদের বাসায় গেলে নিজেদের কেমন যেন রাজা বাদশাহ মনে হয়। মুখ খোলার আগেই চা-পাকোড়া এসে হাজির। এমন বাসায় আড্ডা মারতে মজা লাগবে এটাই তো স্বাভাবিক। শুক্রবার বিকেল পাঁচটার মধ্যেই আমরা হাজির হয়ে যাই। বেশির ভাগ দিন আড্ডা শেষ হতে হতে রাত এগারোটা সাড়ে এগারোটা বেজে যায়। রাকিবের মা ততক্ষণে চলে আসেন। আন্টি রাতের খাবার না খাইয়ে ছাড়েন না কখনো।
আজও শুক্রবার। যথারীতি আমরা জনা আষ্টেক জড়ো হয়েছি রাকিবদের বাসায়। বাসায় অপিরিচিত একজনের সাথে দেখা হলো। রাকিব পরিচয় করিয়ে দিলো, ওর মামা। দেশের প্রথম সারির একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। রাকিব বোঝা গেলো তার মামার বেশ ভক্ত। আমাদের জড়োসড়ো ভাব দেখে উনি নিজে থেকেই এসে আমাদের সাথে গল্প জুড়লেন। এটা ওটা জিজ্ঞাসার পরে আমাদের আড্ডা নিয়ে আলাপচারিতা শুরু হলো।
‘আমার তো বয়স হয়েছে। তোমাদের প্রজন্মটাকে তাই তেমন একটা বুঝতে পারি না। জানতে ইচ্ছে করে তোমরা এই প্রজন্মের ছেলেরা কী নিয়ে আড্ডা মারতে ভালবাসো?
‘আড্ডার কি ফিক্সড্ কোন বিষয় আছে মামা? যখন যা টক অব দি টাউন বলতে পারেন।’
‘রহস্য বিষয়ক ব্যাপার স্যাপারে আনন্দ পাও?’
আমরা কিছু বলার আগেই রাকিব বলে উঠলো,
‘খুব পাই। প্লিজ মামা, তোমার রহস্যের ভাণ্ডার শেয়ার করো না আমাদের সাথে!’ রাকিবের কথা শুনে মনে হলো, তার যেন আর তর সইছে না।
মামা মুচকি হেসে চাইলেন আমাদের দিকে। আমরাও রহস্যের গন্ধে আমোদিত। রাত জমতে শুরু করেছে মাত্র। চা-পাকোড়া আসতে শুরু করলো বলে। আজ হয়ে যাক অন্য রকম কিছু!
মামা শুরু করলেন...
দুই
সাইকিয়াট্রিস্ট এর চাকরীতে একরকম রোমাঞ্চ আছে বলা যায়। মাঝে মাঝে এমন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, যার জন্য মোটেও কোনোরকম প্রস্তুতি থাকে না। অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনারও সাক্ষী হতে হয়। আমার চাকরীজীবনের শুরুর দিকের কথা বলছি।
আমি তখন নতুন প্র্যাকটিস আরম্ভ করেছি। নতুন নতুন সব কিছুতেই উৎসাহ কিছুটা বেশি থাকে। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম ছিল না। আমার কাছে যারা আসতো তাদের সমস্যাকে একেবারে নিজের একান্ত ব্যাক্তিগত সমস্যা বলে মনে হতো। বেশির ভাগ সময় তরুণ তরুণীরাই আসতো নিজেদের হাজার রকম বিচিত্র সব সমস্যা নিয়ে। মানুষের মনের অতল গহীনে, আনাচে কানাচে কত যে অদ্ভূত সব সমস্যার বসবাস! সেই সব সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হতো। প্রথমদিকে শতভাগ সফলও হতে পারতাম না। সমাধান করতে যতই ব্যর্থ হতাম, নিজের মধ্যে ততই যেন রোখ চেপে যেতো। তরুণ তরুণীরা যেমন হাল্কাভাবে নিজেদের সমস্যাগুলোকে বলতো, আসলে সেগুলো মোটেও তেমন হাল্কা ছিল না। সমাধান করতে গিয়ে টের পেতাম, ভেতরে কী জটিল প্যাচ! কিন্তু যতই প্যাঁচালো হোক না কেন, রহস্যের কোন অস্তিত্ব সেগুলোতে ছিল না।
রহস্যের সন্ধান পেলাম একদিন।
বিকেলের দিকে চেম্বারে বসে আছি। তেমন একটা পসার নেই তখন আমার। সবে একটু আধটু জমতে শুরু করেছে মাত্র। সহকারী ছেলেটা এসে জানালো, তিনজন রোগী আছে। এদের মধ্যে একজন অনেকক্ষণ যাবত বসে আছে। তাকেই আগে পাঠাতে বললাম।
উনিশ-কুড়ি বছরের একটা ছেলে। চেহারায় এখনো কৈশোর মিশে আছে। চোখ দুটি ভীষণ রকম জীবন্ত। কথা বলা চোখ যাকে বলে। চেম্বারে ঢুকেই ভয়ে ভয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগল। আমি বসতে বলার পরও যেন দ্বিধা কাটতে চাইছে না। মুখটা কাচুমাচু করে কী যেন ভাবতে লাগল। সাইকিয়াট্রিস্টদের অনেক রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমি ছেলেটাকে সহজ হবার সময় দিলাম।
আস্তে আস্তে একটু যেন সহজ হতে শুরু করলো। আমি নাম, ধাম এটা ওটা বলে আলাপ জমাতে চাইলাম। ছেলেটা একবার সহজ হবার পর তেমন একটা ভনিতা করলো না।
‘আমি শাহেদ। বয়স এই নভেম্বরে তেইশ পূর্ণ হবে। একটা কলেজে বিকম পড়ছি। ছোটবেলা থেকে আমি ভয় পাই...’ এটুকু বলে ছেলেটা একটু দম নিলো। তারপর আবার বলতে শুরু করলো।
‘রাতে নানারকম আজেবাজে স্বপ্ন দেখি। প্রথম যেদিন স্বপ্ন দেখে ভয় পাই দিনটি পরিষ্কার মনে আছে আমার। ক্লাস সেভেনে পড়তাম তখন। আমি আমার ঘরে একা ঘুমাতাম। আমার পাশের ঘরটি ছিল আব্বু আম্মুর। সেদিন বিকেল থেকে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিলো। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎচমক। গরমের দিন ছিলো। বৃষ্টি হওয়াতে আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক শীতল হয়ে গিয়েছিলো। গভীর ঘুমে তলিয়ে আছি। হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেলো। কোন শব্দ বা কিছু শুনিনি, কিন্তু কিছু একটা মনে হলো আমার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। ঘুম ভাঙ্গার পরে কিছুই দেখতে পেলাম না। ভাবলাম হয়তো মনের ভুল। কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিলো। এপাশ ওপাশ করতে করতে আবার কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি। তারপরেই ভয়ানক স্বপ্নটা দেখলাম। মনে হলো, একটা কিছু যেন আমার বুকের উপর চেপে বসেছে। নিঃশ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। স্বপ্নে পরিষ্কার দেখতে পেলাম, সেই কিছু একটা আমার বুকটাকে চিরে ফেলেছে। প্রচন্ড ভয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে জেগে উঠলাম। ততক্ষণে আমার গোঙানির আওয়াজে পাশের ঘর থেকে আব্বু-আম্মু চলে এসেছেন।...সেই থেকে শুরু।’
আমি মন দিয়ে শুনছিলাম। ছেলেটার বক্তব্য এটুকুই মনে করে মুখ খুললাম।
‘শাহেদ, আমার মনে হয় এটা তেমন কিছু না। স্বপ্ন নিয়ে মানুষের নানারকম ফ্যাণ্টাসি কাজ করে। আমরা কেন স্বপ্ন দেখি বিশেষজ্ঞরা এর অনেকরকম ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছেন। তোমার অবচেতন মনের কোন একটা দূর্বল মুহূর্তের ভাবনা থেকেই তুমি এরকমটা দেখেছো।’
‘স্বপ্নটা দেখার প্রায় মাসখানেক বাদে, এক বিকেলে আমার বুকে হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। বাঁ দিকে। আমার বয়স তখন মাত্র তের বছর। ডাক্তারী পরীক্ষা নিরীক্ষায় জানা গেলো, আমার হার্টে একটা বড় রকমের সমস্যা আছে। সুচিকিৎসার আশায় আব্বু আমাকে ভেলোরে নিয়ে গেলেন। সেখানেই আমার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। স্বপ্নটা দেখার ঠিক ছয়মাসের মাথায়।’
এবারে আমি একটু হোঁচট খেলাম। শাহেদ শার্ট খুলে ওর বুকের ঠিক মাঝামাঝিতে সার্জারির দাগটা দেখালো।
আমি তবুও আমার বক্তব্যে অনমনীয় থাকার ভাব দেখিয়ে বলতে চাইলাম,
‘পুরো ব্যাপারটাকে তুমি এভাবে ভাবছো কেন? ব্যাপারটা একেবারেই কাকতালীয় হতে পারে। দুটোর মধ্যে কোন যোগাযোগ আছে এটা একদমই তোমার মনের অবাস্তব কল্পনা।’
শাহেদ আপন মনেই বলতে থাকে। আমার ব্যাখ্যা ওর কানে ঢুকেছে বলে মনে হলো না।
‘আমি তখন অনেক ছোট। বিষয়টা নিয়ে তেমন একটা মাথা আমিও ঘামাইনি। কিন্তু আমি মাঝে মাঝেই নানারকম স্বপ্ন দেখতাম। বেশীরভাগই ঘুম ভাংগার পরে মনে থাকতো না। আমার এই স্বপ্ন দেখে ভয় পাওয়া নিয়ে আম্মু খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এটা ওটা তাবিজ কবজ গলায় ঝুলিয়ে দিতেন। তাতে খুব একটা লাভ কিছু হতো না। এভাবেই আমি বড় হতে থাকি। এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে আবার একদিন আমি স্বপ্ন দেখে জেগে উঠি।’
আমি উৎসাহ বোধ করি। জিজ্ঞেস করি,
‘কি ছিলো স্বপ্নটা?’
‘আমাদের এসএসসি পরীক্ষা চলছিলো। একদিন পড়া শেষ করে ঘুমাতে বেশ একটু রাত হয়ে যায়। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি বলতে পারবো না। ঘুমের মধ্যেই মনে হলো... স্বপ্ন দেখছি, এবং একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি হচ্ছিলো। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের পাড়ার একটা পোড়ো বাড়ির পাশের মাঠে ক্রিকেট খেলছিলাম। আমার বন্ধু রেহান ব্যাট করছিলো। বল করছিলো সজীব। নামগুলো বলছি, কারণ এই নামগুলোর সাথে আমার গল্পের যোগাযোগ আছে। আমি আর কয়েকজন ফিল্ডিংএ ছিলাম।
একটা বলে রেহান ছক্কা মেরে দিলো। বলটা গিয়ে পড়লো সোজা পোড়োবাড়িটায়। আমি বলটা আনতে বাড়িটার ভেতরে ঢুকলাম। গিয়ে দেখি, বলটা কাছেই পড়ে আছে। আমি বলটার দিকে এগুতেই বলটা গড়াতে শুরু করলো। আমিও বলটার পেছন পেছন যেতে লাগলাম। হঠাৎ আমার মনে হলো, কিছু একটা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিলো, খুব কাছাকাছিই সেই কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভয় পেয়ে বল না নিয়েই দৌড় লাগাতে যাবো, এমন সময় সেই কিছু একটা আমার পায়ে খুব জোরে একটা আঘাত করলো। আমি একটা আঘাতেই পড়ে গেলাম। পরদিন অনেক বেলা করে ঘুম ভাংলো আমার। রাত জেগে পড়ছিলাম ভেবে আম্মু আমাকে ডাক দেয়নি। ঘুম ভাংগার পরে আমার হাত আপনাআপনিই চলে গেলো আমার পায়ের কাছে। মনে হলো, জায়গাটা যেনো ফুলে আছে।
এর পরে বেশ কিছু দিন পার হয়ে গেলো। আমি সেদিনের সেই স্বপ্ন ভুলেই গেলাম প্রায়। পরীক্ষা শেষে একদিন রেহান আর সজীব আমাদের বাসায় আসলো। তিন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম, মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াবো। সজীবের বাবা ওকে নতুন মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছেন। নতুন চালানো শিখেছে, কিন্তু আমরা ব্যাপারটা পাত্তা দিলাম না। তিন বন্ধু মিলে বেড়িয়ে পড়লাম। ভালোই চালাচ্ছিল সজীব, হঠাৎ পেছন থেকে আসা একটা ট্রাককে সাইড দিতে গিয়ে আমরা তিনজন মোটরসাইকেল সমেত পাশের একটা ডোবায় গিয়ে পড়লাম। অল্পের উপর দিয়েই বেঁচে গেলাম বলা চলে। সজীব মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল, মাঝখানে রেহান আর পেছনে ছিলাম আমি। সজীব আর রেহান ডোবার মধ্যে গিয়ে পড়ে, ফলে ওদের তেমন কিছু হলো না। আমি ডোবার একটু সামনে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খাই। আমার পা ভেঙ্গে যায়। স্বপ্নটা দেখার প্রায় মাস দুয়েক পর।’
আমি আশ্চর্য হয়ে শুনছিলাম। খুবই অদ্ভুত যোগাযোগ। যদিও বৈজ্ঞানিক কোন যুক্তি কিংবা ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যাবে না, কিন্তু পুরো ব্যাপারটার স্রেফ হ্যালুসিনেশন বা অন্য কোন সরল নাম দিতেও মন সায় দিচ্ছিলো না। কিছুটা অনিশ্চিতভাবে বললাম,
‘তোমার গল্প খুবই অন্যরকম, সন্দেহ নেই। স্বপ্ন কোনভাবে তোমার সাবকনশাস মাইণ্ডকে প্রভাবিত করছে। আর সাবকনশাস মাইণ্ড প্রভাবিত করছে তোমার জীবনকে।’
‘তাই যদি হয়, তবে আমাকে এই প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার কোন উপায় বলে দিন। আমি এই স্বপ্নের হাত থেকে মুক্তি চাই।’
আমি সাইকোলজিতে তখন একজন নিউ প্র্যাকটিশনার। এরকম অদ্ভূত একটা গল্প শুনে আমি বেশ দ্বিধায় পড়ে গেলাম। ছেলেটাকে স্ট্রেস ফ্রি থাকার কিছু পরামর্শ দিয়ে একমাস পরে আসতে বললাম। উদ্দেশ্য, এই সময়টাতে আমি স্বপ্ন নিয়ে একটু পড়াশুনা করবো।
আমি স্বপ্ন নিয়ে ব্যাপক ঘাটাঘাটি করলাম বলা চলে। বই-পুস্তক ঘেঁটে যেখানে যতরকম তথ্য পাওয়া যায়, খুব ভালভাবে জানার চেষ্টা করলাম। ছেলেটার এই অদ্ভূত স্বপ্নের কোন ব্যাখ্যাই আমি কোথাও পেলাম না।
একমাস পর না, ছেলেটা আবার আসলো প্রায় ছয় মাস পর। এবার অনেকটা স্বচ্ছন্দ মনে হলো তাকে। চেহারা বা আচরণে সেই জড়োসড়ো ভাবটা অনেকটাই উধাও। কথা বলে জানতে পারলাম, মন নিয়ন্ত্রণের উপর একটা কোর্সে নাকি ভর্তি হয়েছে। আগে প্রায় সময়ই ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখতো। এখন স্বপ্ন দেখার হার আগের চেয়ে কমে এসেছে। ঘুম অনেক গাঢ় হয়েছে।
তিন
তারপরে কেটে গেছে অনেক দিন। প্রায় পাঁচ-ছয় বছর। ছেলেটা আর আসেনি আমার কাছে। আমিও কেসটা ভুলে গেছি প্রায়। ইতিমধ্যে বেশ খানিকটা পসারও জমে গেছে। তারপরে একদিন আচমকাই ছেলেটা আবার আসলো।
চেহারায় সেই প্রথমদিনের বিভ্রান্তি, আড়ষ্ঠতা। জানালো, অনেক দিন পরে স্বপ্নের সেই বিভীষিকা আবার দেখা দিয়েছে। এবারে সেই বিভীষিকা তার মাথার উপর হাত রেখেছে, আর তারপরপরই সে ঘুমিয়ে পড়েছে। অর্থাৎ ঘুমের মধ্যেই সে নিজেকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখেছে। সে আশংকা করছে, তার মৃত্যুর কোন আগাম বার্তা এটা। বলতে সংকোচ নেই, একই সন্দেহ আমিও পোষণ করলাম, তবে মনে মনে।
এর পরে আমি অনেকটা নিজের দায়িত্বেই খোঁজ রাখি ছেলেটার। এই রহস্যময় স্বপ্নের কোনো ব্যাখ্যা কিংবা সমাধান আমার কাছে ছিলো না। কিন্তু এর রহস্যময়তা আমাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করেছিলো।
ছেলেটি এই স্বপ্নটা দেখার পর আমার জানামতে আজ অবধি জীবিত আছে। কিন্তু কোনো অজানা এক কারণে সে তার স্মৃতিশক্তি সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলেছে। সে তার শরীরটাকেই যেনো ধারণ করছে মাত্র। সময় আর জীবনের সমস্ত হিসেবনিকেশ আবার নতুন করে লেখা শুরু হয়েছে তার জীবনে। অথবা পুরো ব্যাপারটাই যেনো একটা দীর্ঘ স্বপ্ন, ঘুম ভাঙার পরে ভেঙে যাওয়ার অপেক্ষায়।
অর্থাৎ, একজন ঘুমন্ত মানুষের সাথে তার বাহ্যত কোনোই পার্থক্য নেই আর...।